Home.jpg

Pioneer Technical Training Academy
Best IT Institute in Bangladesh

Pioneer Study Abroad

বর্তমান সময়ে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ দেশের সিংহভাগ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। কিন্তু কেনো সে বিদেশে পড়তে যেতে ইচ্ছুক সে বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য জানা নেই।

সঠিক তথ্য অনুযায়ী অনেক শিক্ষার্থী তার বহুদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হলেও অনেকে সঠিক তথ্য ও জানাশোনার অভাবে মাঝপথে এসে সব হারিয়ে তাদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।

তাই বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। তাই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চাইলে প্রথমেই ভাবতে হবে আপনি কেনো বিদেশে পড়তে যেতে চান,

তারপর ভাবতে হবে আপনি যে কোর্সটি করার জন্য বিদেশে যেতে চাইছেন সেই কোর্সটি দেশে কোথাও করা যায় কিনা, করা গেলেও দেশে ও বিদেশে আপনি কি কি সুবিধা ও অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন তা পাশাপাশি দাড় করিয়ে বিবেচনা করুন।

সবদিক বিবেচনা করে যেই সিদ্ধান্ত আপনার জীবনে কোনো অনিশ্চয়তা বয়ে না আনবে সেই পথটি বেছে নেওয়াই উত্তম।

শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের দেশ বিনির্মাণের কারিগর। তাই তাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে, কোন ধরণের আপোষ তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে প্রতিবন্ধকতা বয়ে নিয়ে আনার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করবে।

পুঁথিগত বিদ্যাকে পেছনে ফেলে দক্ষতা এবং প্রযুক্তির জোরে এগিয়ে চলছে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রসমূহ। তাই আগামী ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে একজন যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথাগত শিক্ষাকে পেছনে ফেলে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন দেখে প্রতিটি শিক্ষার্থী।

কেন বিদেশে শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা এবং দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিবেন এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সাথেই থাকুন।

কেন উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশ যাবেন?

শিক্ষার ক্ষেত্রটি সবসময়েই প্রসারণশীল। যুগে যুগে শিক্ষার ক্ষেত্রে কখনই নির্দিষ্ট গন্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং দেশ কাল জাতি সংস্কৃতি প্রভৃতির মাঝে বিস্তৃতিই শিক্ষার মৌলিক ক্ষেত্র ও সীমানা হিসাবে বিবেচিত হয়।

আপনি যদি প্রসারিত দৃষ্টিভঙ্গি ও বিচিত্র দক্ষতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে চান তবে দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। এখানে উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে যাওয়ার স্বপক্ষে কয়েকটি যুক্তি সঙ্গত পয়েন্ট তুলে ধরা হলো।

ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে বর্তমানে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যেতে ইচ্ছুক। উন্নতমানের জীবনযাত্রা, আধুনিক পড়াশোনা এবং শিক্ষার পাশাপাশি চাকরীর ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকার কারণে আজকাল বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে।

বিদেশী ডিগ্রির গ্রহণযোগ্যতা সময়ের সাথে সাথে বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ চাকরির ক্ষেত্রে কিংবা বিশ্বের যেকোনো দেশে চাকরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয় বিদেশী ডিগ্রিকে।

গবেষণা-মুখী শিক্ষা, পর্যাপ্ত পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা, রেসিডেন্সি পারমিট পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিজ ভবিষ্যৎ জীবনকে সুন্দর করার লক্ষ্যে আজকাল অনেক শিক্ষার্থী নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছুটে চলছে বিদেশে।

তাই আপনি যদি শিক্ষাজীবনকে আধুনিক শিক্ষায় এবং প্রায়োগিক জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত চান তাহলে বিদেশে উচ্চশিক্ষা হতে পারে আপনার স্বপ্ন পূরণের ক্ষেত্রে অন্যতম পন্থা।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে পূর্ব প্রস্তুতি কীভাবে নিবেন?

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বিদেশে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করার স্বপ্ন নিয়ে তার স্নাতক ডিগ্রি শেষ করে। কোন কোন শিক্ষার্থী আবার এইচএসসি পর স্নাতক লেভেলে পড়ার জন্য পাড়ি জমায় তাদের স্বপ্নের দেশে।

তবে প্রত্যেক শিক্ষার্থী যে লেভেলের হোক না কেন তার বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে তাকে কিছু পূর্ণ প্রস্তুতির প্রয়োজন পরে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক একজন শিক্ষার্থীর বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কি ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি প্রয়োজন হয়।

আপনার লক্ষ্য এবং লক্ষ্যে পৌছার পথ:

বিদেশে পড়তে যাওয়ার সম্ভাব্য বিষয়গুলো বিবেচনার পর নিজেকে প্রশ্ন করুন, কেন বিদেশে পড়তে যেতে চান। কারনগুলো খুজে বের করতে কিছুটা সময় নিন।

কেননা এই কারন গুলোর সাথে জরিয়ে আছে আপনার ভবিষ্যত সম্ভাবনা।

হয়তো আপনি নতুন একটি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক অথবা নতুন ভাষা শিখতে চান কিংবা আপনি আপনার পড়ালেখার ক্ষেত্রটিকে ভিন্নমুখী আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন একটি ডিগ্রি অর্জন করতে চান। কারন যাই হোক না কেন, একটি নোট বইয়ে সেগুলো লিপিবদ্ধ করুন।

বিদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রস্তুতি:

* প্রথম প্রস্তুতি হতে পারে পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করা। কারণ, কেবল পরীক্ষায় ভালো ফল নয় সত্যিকার শিক্ষাটা কাজে আসবে এখানে। ইংরেজীতে দক্ষতা থাকতে হবে। তবে চীন, জাপান, জার্মানী, ফ্রান্স এসব দেশে যেতে চাইলে ঐ দেশের ভাষাটা শিখে নেয়া ভালো।

* সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট ইংরেজীতে করিয়ে নিতে হবে।

* পাসপোর্টে যাতে কোন সমস্যা না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট হওয়া দরকার।

* যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চাইছে তার খরচ বহন করা তার পক্ষে সম্ভব কিনা সেটা আগে থেকেই যাচাই করা উচিত। যদি কর্তৃপক্ষ মনে করে ব্যয়ভার বহন করা শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব নয়, তাহলে ভিসা মিলবে না।

* GRE, SAT, GMAT এবং IELTS বা TOFEL-এ ভালো স্কোর না থাকলে বিদেশে পড়াশোনার চেষ্টা করে লাভ নেই। বিশেষত বৃত্তি যে মিলবে না এটা নিশ্চিত।

সঠিক কোর্স নির্ধারণ:

পেশাগত উন্নতি ও লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য কোন ধরনের পেশা আপনার জন্য উপযুক্ত তা খুঁজে বের করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি পেশাগত সফলতা বা আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নে সেই পেশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোর্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহন কম তাৎপর্যপূর্ন নয়।

তাই বর্তমান গ্লোবালাইজেশনের যুগে উচ্চশিক্ষার অনেক কোর্সের মধ্যে আপনাকে এমন একটী কোর্স বেছে নিতে হবে যা আপনার ভবিষ্যৎ পেশাগত দক্ষতার পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে গণ্য হবে।

তাছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আপনি একেবারে একটি নতুন বিষয়ও বেছে নিতে পারেন। আমাদের দেশে প্রচলিত নয় কিন্তু বিশ্ব প্রেক্ষাপটে গুরত্বপূর্ন এবং চাহিদা সম্পন্ন এরকম কোন বিষয়কেও আপনি পছন্দ করতে পারেন।

তবে সাধারনত বিদেশের পাশাপাশি আমাদের দেশও যথেষ্ট চাহিদা আছে এরকম কোন কোর্সকে উচ্চশিক্ষার নির্বাচন করাই শ্রেয়।

উপযুক্ত কোর্স নির্বাচনে যে বিষয় গুলো লক্ষ্য রাখা উচিত :-

* আপনি পেশাগত জীবনে কোন পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান এবং সে অনুযায়ী আপনার বর্তমান যোগ্যতা সাপেক্ষে কোন কোর্সটি সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে হয়?

* উক্ত কোর্সের কোন বিকল্প কোর্স আছে কি না?

* আপনি যে দেশে পড়তে যেতে আগ্রহী সে দেশে উক্ত কোর্সে উচ্চশিক্ষার মান বা পদ্ধতি বিশ্বে কতোটুকু গ্রহনযোগ্য বা সমইয়োপযোগী।

* কাঙ্ক্ষিত কোর্সটিতে পড়াশোনা শেষে কোথায় কর্মক্ষেত্র গড়ে তুলবেন এবং সেখানে এর সুবিধা বা সম্ভাবনা ও অসুবিধা বা প্রতিবন্ধকতার মাত্রা কতোটুকু?

* আপনি যে দেশে পড়তে যাচ্ছেন সেখানে উক্ত কোর্সটি কত বছর মেয়াদি এবং টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচ আপনার সামর্থের মধ্যে কিনা?

* উক্ত কোর্সে পড়াশোনাকালীন সময়ে কোন আর্থিক সহায়তা বা বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে কিনা; যদি থাকে, তবে কি ধরনের যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্ধারন করা হবে এবং আপনি কতোটুকু পূরন করতে সক্ষম হবেন? উল্লেক্ষিত প্রশ্নগুলোর সঠিক ও গ্রহনযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়ার জন্য আপনি উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নিতে পারেন। এছাড়া উক্ত কোর্সে পড়াশোনা করেছেন বা করছেন এরকম কোন বিদেশী বা দেশী শিক্ষার্থীর সাথে আলাপ করে নিতে পারেন।

ক্রেডিট ট্রান্সফার:

আপনি দেশেরই কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কোর্সে কিছুদিন পড়াশোনা করেছেন বা করছেন, কিন্তু এখন আপনি ওই কোর্সেই বিদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী, সেক্ষেত্রে দেশে সম্পন্নকৃত কোর্সটির ক্রেডিট সমূহ গ্রহন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট এক্সেমশন দাবী করতে পারেন।

আপনার কৃত কোর্সটির জন্য কতোটুকু ক্রেডিট পাবেন তা নির্ধারন করবে ঐ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আপনাকে কাগজ পত্রের মাধ্যমে প্রমান করতে হবে যে আপনার কৃত কোর্স স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা এবং

এই বিষয় সমূহ বিদেশের ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত বিষয়েরই অনুরূপ। ক্রেডিট ট্রান্সফারের জন্য যে সনদ ও কাগজপত্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনার কাছে চাইতে পারেন সেগুলো হলো :-

* একাডেমিক সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, প্রত্যয়নপত্র।

* কোর্সের আউটলাইন এবং পাঠ্যতালিকা।

* কোর্স লেভেল সম্পর্কিত তথ্যাদি।

* কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় অনুষদ কর্তৃক সুপারিশনামা।

* কোর্স এসেসমেন্টের পদ্ধতি (পরীক্ষা, রচনা, প্রজেক্ট ওয়ার্ক ইত্যাদি)।

* গ্রেডিং সিস্টম সংক্রান্ত তথ্য।

* কোর্সের মেয়াদ, লেকচার-ঘন্টা, ল্যাবরেটরিতে কাজের ঘন্টা, ফিল্ডওয়ার্ক ইত্যাদি।

দেশ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন:

বিদেশে পড়াশোনার জন্য দেশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই গভীরভাবে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারন প্রতিটি দেশে পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধা এক রকম নয়।

যেমন- কোন দেশে টিউশন ফি বেশি, কোন দেশে কম, আবার টিউশন ফি আদৌ লাগেনা আবার কোন দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই মানের কোর্সের মেয়াদ কম, কোন দেশে আবার বেশি।

কোথাও পার্ট টাইম জব করা যায়, কোথও পার্ট টাইম জব হয়তো পাওয়া যায় না, আবার কোথাও কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। কোন দেশে সহজেই স্কলারশিপ পাওয়া যায়, আবার কোন কোন দেশে স্কলারশিপ পাওয়া বেশ কঠিন।

কোন দেশের আবহাওয়া খুবই বিরূপ, আবার কোন দেশের আবহাওয়া নান্দনিক ও স্বাস্থকর। আবার এমনও দেশ আছে যেখানে পড়াশোনাকালীন সময়েই নাগরিকত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা থকে।

সুতরাং সবকছু সুক্ষ্মাতিসুক্ষ বিশ্লেষন করে, সময় নিয়ে ভেবে চিন্তে তবেই দেশ নির্বাচন করুন। এক্ষেত্রে এ সাইটে প্রদত্ত দেশগুলো সম্পর্কে সর্বোচ্চ সংখ্যক তথ্য দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

তারপরও আত্মীয়স্বজন বা পরিচিত কেঊ যারা ঐ দেশে থাকেন বা ঐ দেশে সম্পর্কে ভাল জানেন, আপনার উচিত তাদের কাছ থেকে আরও তথ্য সংগ্রহ করা। বর্তমানে প্রায় প্রত্যেকটি দেশেরই বিভিন্ন বিভাগের নিজস্ব সরকারী ওয়েব সাইট আছে।

যদি আপনার জানা না থাকে তবে Google বা Yahoo- এ রকম সার্চ ইঞ্জিন এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটগূলো খুঁজে নিয়ে ভিজিট করুন এবং সেখানকার শিক্ষা ব্যাবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খরচ, স্কলারশিপ তথ্য, আবাসন ব্যাবস্থা, জীবনধারা, আবহাওয়া, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জানার পর উপযুক্ত দেশ নির্বাচন করুন।

এক্ষেত্রে দু-তিনটি দেশ নির্বাচন করা ভাল। কারন একটি মাত্র দেশ পছন্দ করলে সেখানকার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পরও ভিসা পেতে ব্যর্থ হতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার বিদেশে যাত্রা অন্তত এক শিক্ষাবর্ষের জন্য পিছিয়ে যাবে।

দেশ নির্বাচনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বেশ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিক ভাবে নির্বাচন করুন। কারন আর কিছুই না, অধিক পরিমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শর্ত গুলো জেনে নিয়ে আপনার জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে সহজ হবে।

আর ২/১ টি প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করলে হয়তো দেখা যাবে তাদের শর্তগুলো পালন করে সেখানে ভর্তি হওয়া বা পড়াশোনা করা আপনার জন্য অপেক্ষাকৃত কঠিন অথবা অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভবও হতে পারে।

তাই কমপক্ষে ৮/১০ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাথমিকভাবে যোগাযোগ করে তাদের বিভিন্ন তথ্য জানার চেষ্টা করুন এবং এক্ষেত্রে যে সব বিষয়কে গুরত্ব দিতে হবে সেগুলো হলো :-

* আপনার পছন্দকৃত বিষয় আছে কি না?

* পড়াশোনার মান কেমন?

* শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের ব্যাকগ্রাউন্ড কেমন?

* শিক্ষা প্রুতিষ্ঠানের অবস্থান কোথায়?

* লেখাপড়ার ও অন্যান্য খরচ কত এবং পরিশোধের পদ্ধতি কেমন?

* স্কলারশিপ সুবিধা বা আর্থিক সহায়তার সম্ভাবনা আছে কি না?

* আবাসন ব্যবস্থা?

* ভর্তি যোগ্যতা ইত্যাদি।

শিক্ষার্থিদের বিশেষ করে খরচের ব্যাপারটা ভালভাবে মাথায় রাখা উচিত। এক্ষেত্রে যারা স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যাবেন তাদেরকে যে বিষয় গুলো ভাবতে হবে-

* স্কলারশিপের মেয়াদ কত এবং নবায়ন করা যাবে কিনা, যদি যায় তবে কি ধরনের যোগ্যতার ভিত্তিতে?

* স্কলারশিপের অর্থে কি কি খরচ করা যাবে?

* সেখানকার জীবন যাত্রা কেমন ব্য্য বহুল এবং আপনার পক্ষে স্কলারশিপের অর্থে তা নির্বাহ করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কি না?

যারা নিজ খরচে পড়াশোনা করতে যাবেন তাদের যে বিষয় গুলো ভাবতে হবে-

আপনার পছন্দের কোর্সটিতে সুর্বমোট খরচ কত এবং কিভাবে পরিশোধ করতে হবে। উল্লেখ্য যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ই-মেইল করলে তারা মোট খরচের একটি খসড়া হিসাব ও পরিশোধের পদ্ধতি জানিয়ে দেবে।

এতে যে বিষয়গুলো সাধারনত অন্তর্ভূক্ত থাকবে সেগুলো হলো- টিউশন ফি, আবাসন খরচ, খাবার খরচ, বইপত্র বাবদ খরচ, ইন্স্যুরেন্স খরচ ইত্যাদি।

* খরচ গুলো কমানোর কোন বিকল্প উপায় আছে কিনা। যেমন- অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে না থেকে কোন পরিবারের সাথে থাকলে খরচ কম লাগে। আবার কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ সেমিস্টারের টিউশন ফি একসাথে দিলে কিছুটা কমিশন বা ছাড় পাওয়া যায়।

* আর্থিক সহায়তা, ঋণ বা স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা। যদি থাকে তবে কি যোগ্যতার ভিত্তিতে।

* দেশটির জীবনযাত্রা কেমন ব্যায়বহুল এবং আপনার পক্ষে তা নির্বাহ করে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কি না।

প্রয়োজনীয় কাগপত্র তৈরী:

বিদেশে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে প্রথমেই একাডেমিক কাগজপত্রসহ যাবতীয় ডকুমেন্টস প্রস্তুত করার ব্যাপারে নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে সকল কাগজপত্র ইংরেজি ভাষায় হতে হবে।

ইদানিং বোর্ড বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই পরীক্ষা সনদপত্র বা নম্বরপত্রগুলো ইংরেজিতে প্রদান করা হচ্ছে। তবে যে সব কাগজপত্র ইংরেজিতে করা নেই সে সব অনুবাদ করিয়ে নিতে হবে।

এক্ষেত্রে দু’ভাবে অনুবাদ করা যায়। বোর্ডের একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিমান ফি বাংক ড্রাফটের মাধ্যমে জমা দিয়ে শিক্ষা বোর্ড থেকে সনদপত্র ও নাম্বারপত্রের অনুবাদ কপি তোলা যায়।

তবে পূর্বের মূলকপি বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জমা দিতে হবে। এটাই হচ্ছে সনদপত্র ইংরেজি ভাষায় অনুবাদের উত্তম পদ্ধতি। তবে একটু সময় বেশি লাগে বলে আপনি ইচ্ছে করলে নোটারী পাবলিক থেকেও অনুবাদ করাতে পারেন। এক্ষেত্রে পূর্বের মূলকপি এবং অনুবাদকৃত কপি একসাথে রাখতে হয়।

উল্ল্যেখ যে, ছবি এবং প্রয়োজনীয় সকল ফটোকপি অবশ্যই সত্যায়িত করে নিতে হবে। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রানালয়ের একটি বিশেষ শাখা থেকে সকল কাগজ পত্রের মূলকপি দেখানো সাপেক্ষে বিনামূল্যে সত্যায়িত করা যায়। এছাড়া নোটারী পাবলিক থেকেও সত্যায়িত করা যায়।

আবেদন এবং ভর্তি প্রসেসিং:

নির্দিষ্ট দেশের বাছাইকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য প্রথমে ভর্তি তথ্য, প্রসপেকটাস ও ভর্তি ফরম চেয়ে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র কুরিয়ার যোগে, ফ্যাক্স বা ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠানো যায়। তবে ই-মেইলে পাঠানো ভাল।

আবেদন পত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌচ্ছালে তারা আপনার ঠিকানায় ভর্তির আবেদন ফরম ও প্রসপেকটাস পাঠিয়ে দিবে। এতে সাধারনত দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগে। তবে অনেক ক্ষেত্রে আপনার ই-মেইল আড্রেস দিলে সেখানেও আবেদন ফরম দিতে পারে। আবার কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েব সাইটে আবেদন ফরম দিয়ে থেকে। এক্ষেত্রে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে।

এরপর আবেদন ফরমটি প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিয়ে নির্ভুলভাবে পূরন করে প্রসপেকটাসের নির্দেশনা অনুসারে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র ও আবেদন ফি/ব্যাংক ড্রাফট কোন আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস বা রাষ্ট্রীয় ডাকের মাধ্যমে নির্দেশিত ঠিকানায় পাঠাতে হবে।

উল্লেখ্য যে, আবেদন ফি অফেরতযোগ্য। আর হ্যাঁ, মনে রাখা প্রয়োজন যে, কোন প্রকার অসত্য তথ্য দিলে ভর্তি অনিশ্চিত বা পরবির্তিতে বাতিলের সম্ভাবনা থেকে এবং ভিসা পেতে সমস্যা হতে পারে।

তাছাড়া ফরম পূরনের সময় কাটাকাটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে ফরমটি ফটোকপি করে আগে ফটোকপি পূরন করুন এবং পরবর্তীতে সেটা দেখে মূল ফরমটি পূরন করুন।

আবেদনপত্রের সাথে সাধারনত যেসব কাগজপত্র পাঠাতে হয়-

১. সকল একাডেমিক কাগজপত্রঃ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বা তদূর্ধব সকল সনদপত্র ও নম্বরপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি এবং সাবেক বা বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সুপারিশপত্র।

২. ভাষাগত দক্ষতার প্রমানপত্রঃ নির্বাচিত দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্তানুযায়ী যে ভাষার দক্ষতা থাকতে হবে সে ভাষায় দক্ষতার প্রমানস্বরূপ ভাষা শিক্ষা কোর্সের সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।

৩. উলেখ্য যে, ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষার ক্ষেত্রে যদি সে দেশে গিয়ে চান তবে তার পূর্বতন ভাষা হিসেবে ইংরেজিতে দক্ষতার প্রমান স্বরূপ IELTS/TOFEL এর সনদপত্রের সত্যায়িত কপি পাঠাতে হবে। তবে কোন কোন দেশের ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতার সনদ পত্র লাগে না।

৪. আর্থিক সামর্থের প্রমানপত্রঃ যিনি আপনার বিদেশে পড়াশোনাকালীন যাবতীয় খরচ বহন করবেন তার অঙ্গীকারপত্র, আর্থিক সামর্থের প্রমানস্বরূপ ব্যাংক গ্যারান্টিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। উল্লেখ যে, নিজ খরচে পড়ার ক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থের প্রমানস্বরূপ স্পন্সরের নামে দেশভেদে বিভিন্ন অংকের অর্থের ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট এবং অনেক ক্ষেত্রে এ সলভেন্সি সার্টিফিকেট এর বৈধতার পক্ষে বিগত ৬ মাসের ব্যাংক লেনদেন রিপোর্টের সত্যায়িত কপি পাঠাতে হয়।

৫. আবেদন ফি-এর ব্যাংক ড্রাফটঃ দেশ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভেদে আবেদন ফি বাবদ ৭০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট পাঠাতে হয়।

ভর্তির অনুমতিপত্র পাওয়ার পর করনীয়:

ভর্তির অনুমতিপত্র বা অফার লেটার পাওয়ার পর সাধারনত অফার লেটারে বা প্রসপেক্টাসে উল্লেখিত টিউশন ফি’র সমপরিমান অর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক ড্রাফট করতে হবে যা ভিসা ইন্টারভিউয়ের সময় দূতাবাসে দেখাতে হয় এবং ভিসা পেলে পরবর্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমা দিয়ে দিতে হবে।

কিন্তু টিউশন ফি বা এরকম বেশি পরিমান অর্থ ব্যাংক ড্রাফট করতে হলে ব্যাংকে নিজের নামে একটি স্টুডেন্ট ফাইল চালু করতে হবে এবং সেখান থেকেই বিদেশে পড়াশোনাকালীন সকল আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করা যাবে।

ব্যাংকে স্টুডেন্ট ফাইল খোলার জন্য যে সমস্ত কাগজপত্র লাগে সেগুলো হল :-

(১) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রসপেক্টাস বা ভর্তির প্রমানপত্র বা ভর্তি ফরম

(২) পাসপোর্ট

(৩) শিক্ষাগত সনদপত্র

(৪) পুলিশ ছাডপত্র এবং

(৫) ছবি।

উল্লেখ যে, বিভিন্ন ব্যাংকের বৈদেশিক বিনিময় শাখাগুলোতে স্টুডেন্ট ফাইল খোলার জন্য আলাদা কেন্দ্র রয়েছে।

ভিসা প্রসেসিং:

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর তাদের পাঠানো অফার লেটার বা ভর্তির অনুমতিপত্রে উল্লেখিত ডেডলাইনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানে পৌচ্ছাতে হবে। অন্যথায় ভর্তি বাতিল হবে।

তাই নির্দিষ্ট তারিখের পূর্বে আপনাকে সেদেশের ভিসা সংগ্রহ করতে হবে। ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও প্রায় সব নিয়মই এক রকম। কোন দেশে ভিসা পেতে হলে প্রথমে সে দেশের ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ভিসার আবেদনপত্র সরবরাহ করে থাকে।

তা না হলে নির্দিষ্ট দূতাবাস থেকে ভিসার আবেদনপত্র সংগ্রহ করে সঠিক তথ্য দিয়ে নির্ভুল ভাবে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রসহ দূতাবাসে জমা দিতে হবে এবং নির্দিষ্ট দিনে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহ করতে হবে।

ভিসার জন্য সাধারনত যে সব কাগগপত্র লাগে :-

১. শিক্ষাগত কাগজপত্রঃ সনদপত্র, নম্বরপত্র, প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রশংসাপত্রের সত্যায়িত ফটোকপিসহ মূলকপি।

২. পাসপোর্টঃ পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ১ বছর থাকতে হবে এবং পেশা, জন্ম তারিখ ও অন্যান্য সকল তথ্যের সাথে শিক্ষাগত কাগজ পত্রের মিল থাকতে হবে। আপনার পাসপোর্ট করা না থাকলে পাসপোর্ট করে নিন।

৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রমানপত্র বা অফার লেটার।

৪. আর্থিক সামর্থ্যের প্রমানপত্রঃ আবেদন ও ভর্তি প্রসেসিং অংশে এ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখে নিন।

৫. ছবিঃ সাদা ব্যাকগ্রউন্ডে, পরিস্কার ভদ্র পোশাকে তোলা স্মার্ট ও স্পষ্ট ছবি হলে ভাল হয় এবং রঙ্গিন হওয়াই উত্তম।

৬. টিউশন ফি’র ব্যাংক ড্রাফটঃ প্রতিষ্ঠান ভেদে টিউশন ফি ভিন্ন হয়ে থাকে।

৭. ভাষাগত দক্ষতার প্রমানপত্রঃ আবেদন ও ভর্তি প্রসেসিং অংশে দেখুন।

৮. পুলিশ ছাড়পত্রঃ পুলিশ ছাড়পত্রের জন্য নিজ নিজ থানায় যোগাযোগ করে একটি নির্দিষ্ট ফি প্রদানের মাধ্যমে এটি সংগ্রহ করা যায়। তবে আপনার বিরুদ্ধে দেশ ও আইনবিরোধী কন কাজে জরিত থাকের অভিযোগ থাকলে আপনি পুলিশ ছাড়পত্র পাবেন না।

দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি: ভর্তি অ ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর প্রস্তুতি নিতে হবে বিদেশ যাত্রার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ভিসার ডেডলাইন যাই হোক না কেন তার বেশ কয়েকদিন আগেই দেশ ত্যাগ করা ভাল। কারন অনেক সময় আবহওয়াজনিত ও অন্যান্য কছু কারনে যাত্রাপথে বিলম্ব হতে পারে। সেক্ষেত্রে হাতে সময় না থাকলে বিপদ হতে পারে।

দেশ ছাড়ার পূর্বে আপনার পাসপোর্ট, ভিসা ইত্যাদি যথাযথ অবস্থায় আছে কি না দেখে নেবেন। বিদেশে অবস্থানের সময় এই সব দলিল আপনাকে অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে। আপনি কোন পথে বিদেশে যেতে চান তা নির্ধারন করার সময়ও অনেকগুলো বিকল্প পথ ভাবার অবকাশ আছে। বিমানযোগে ভ্রমন করতে চাইলে মনে রাখবেন অনেক এয়ারলাইন্সে ছাত্রদের জন্য কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে। অনেক ক্কেত্রে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ছাত্রদের জন্য ডিসকাউন্ট রেটে টিকিট দিয়ে থাকে। আপনি নির্ধারিত দিনের টিকিট যদি বেশ ক’মাস আগে করেন তবে এক্ষেত্রে অনেক এয়ারলাইন্সে আপনি ছাড় পাবেন। বিদেশে গিয়ে কোথায় থাকবেন এবং আপনার আবাসনের বিষয়টি কেমন হবে তা সম্পর্কেও খোঁজখবর নিন। স্বাস্থ ও নিরাপত্তা বিষয়ক ইস্যুগুলো সম্পর্কে জানুন। সে দেশের আইন অনুযায়ী কি করা যাবে আর কি করা যাবে না তার সম্পর্কে ধারনা থাকাটা জরুরি। আর্থিক দিকগুলো সম্পর্কেও আপনার সচেতন থাকাটা জরুরি। পেমেন্ট করার সঠিক সময়টা কবে হবে, আর্থিক অনুদান পেয়ে থাকলে সেই টাকা হাতে পাবার ব্যাপারে কী কী করনীয় ইত্যাদি বিষয়গুলো জেনে নিন। বিদেশে থাকার সময় কিভাবে আপনার পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখবেন- টেলিফোন, ডাক, ই-মেইল ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা পর্যাপ্ত কিনা বা তার জন্য আপনার কত খরচ হবে এ সংক্রান্ত তথ্যগুলো সংগ্রহ করুন। সর্বোপরি আপনি যে দেশে যাচ্ছেন তার ইতিহাস, রাজনীতি, আইনকানুন, রীতিনীতি প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে যতোটুকু সম্ভব জেনে নিন।

আরো কিছু জ্ঞাতব্য বিষয়: সংশ্লিষ্ট দেশের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসঃ যখন আম্পনি সংশ্লিষ্ট দেশের বিমানবন্দরে অবতরন করবেন তখন আপনার সেদেশে আসার উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য অবস্থানের সময় কাল সম্পর্কে ইমিগ্রেশন অফিসার জিজ্ঞাসা করবেন। ইমিগ্রেশন অফিসার আপনার পাসপোর্ট, ভিসা, স্বাস্থ্য ও প্রতিষেধক সনদ ইত্যাদি পরীক্ষা করবেন। তারপর তারা ঐ দেশে ঢোকার জন্য আপনাকে অনুমতি দেবেন। ঐ দেশের নিয়ম অনুসারে বা বিভিন্ন সময়ের বা ঋতুর চাপ অনুসারে ইমিগ্রেশনের আইনকানুন ও পদ্ধতি দ্রুত অথবা সময়সাপেক্ষ অথবা ক্লান্তিকর হতে পারে। দীর্ঘ সময়ের বিমান ভ্রমনের পরে ইমিগ্রেশনের দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর পদ্ধতি আপনার কাছে বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে। কিন্ত ধৈর্য ধরে এবং নম্র ভাবে ইমিগ্রেশন অফিসারের সকল প্রশ্নের জবাব দিন। ইমিগ্রেশনের পর আসবে কাস্টমস। কি কি জিনিস আপনি বহন করছেন তার একটি তালিকা আপনাকে কাগজে লিখতে হতে পারে। এখানেও সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর ভদ্রভাবে দিন। কাস্টমস অফিসার প্রয়োজনে আপনার ব্যাগ চেক করতে পারেন। সতরাং তার প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করুন।

বিমান ভ্রমন জনিত ক্লান্তিঃ দীর্ঘ বিমান ভ্রমনের ফলে এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অঞ্চলের ভিতর দিয়ে যাওয়ার ফলে আপনি শারীরিক কিছু পরিবর্তন অনুভব করতে পারেন। হয়তো আপনি ভুল সময়ে ঘুমাবেন এবং জেগে উঠবেন, শারীরিক ভাবে দূর্বল ও ক্লান্তি অনুভব করবেন এবং কিছুটা অস্থিরতায় ভোগবেন। যখনই আপনার শরীরের অন্তরস্থিত ঘড়িটা অন্তত সময়ের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিবে তখন অর্থাৎ কয়েকদিন কেটে গেলে এই অবস্থাটা ঠিক হয়ে যাবে। এ সম্পর্কে আরেকটি টিপস হল নতুন দেশে পৌচ্ছানোর কিছুক্ষন পর হালকা ব্যায়াম করুন এবং ঐ দেশের সময় অনুযায়ী ঘুমাতে যান। এর ফলে নতুন পরিবেশে শরীরের অভিযোজন ত্বরান্বিত হবে।

উল্লেখ্য যে, বিদেশে উচ্চশিক্ষার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশ আগত ছাত্রদের জন্য অভ্যর্থনার ব্যাবস্থা রাখে। বিমানবন্দরে পৌচ্ছেই সে ক্ষেত্রে আপনি একজন গাইড পাবেন, যে আপনাকে নতুন ঐ পরিবেশ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জ্ঞাপন করবেন। টিপসগুলো জেনে নিন নিজেদের স্বার্থে, পরবর্তীতে কোন সময় উপকারে আসতে পারে।

কোন এডুকেশন কনসালটেন্সি ফার্মের মাধ্যমে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চাইলে আগে তাদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া উচিত। বিদেশে যাওয়ার অনেকগুলো কারন থাকতে পারে, তবে তা যেন সার্থক ও ইতিবাচক হয়। মনে রাখবেন, একটি ভিন্ন দেশের ভিন্ন পরিমন্ডলে জীবন যাপন এবং শিক্ষা গ্রহনের সাথে মানিয়ে নেয়া কঠিন ও শ্রমসাধ্য। তাই লক্ষের ব্যাপারে যতোবেশী সচেতন ও উদ্যেগী হবেন, বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে ততো বেশি লাভবান হবেন।

১. প্রস্তুতি গ্রহণ করুন আগে থেকে: বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে আপনাকে নিতে হবে আগে থেকেই প্রস্তুতি। সেক্ষেত্রে আপনাকে একাডেমিক রেজাল্ট এর দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। একাডেমিক রেজাল্টের পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলামের দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাইরের দেশের কোন শিক্ষার্থীর বিদেশ ভ্রমণকে বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।

আপনি যত পারবেন ভ্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ ভ্রমণ মানুষকে উদার এবং বিনয়ী হতে সাহায্য করে। এছাড়াও আপনি বিভিন্ন ভলেন্টিয়ারিং কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধি করুন। এই সকল সহশিক্ষা কার্যক্রম আপনাকে বাইরের দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।

২. ইংরেজি দক্ষতা যাচাই: বিদেশে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে আপনাকে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হল ভাষা-গত দক্ষতা যাচাই করা। প্রত্যেকটি দেশে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা রয়েছে। আপনি যখন যে দেশে যাবেন তখন আপনাকে সে ভাষার দক্ষতা যাচাই স্কোরের উপর ভিত্তি করে আপনি আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ কিংবা ভিসার জন্য নির্বাচিত হবেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে ভাষা-গত দক্ষতা যাচাই করা ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ!

আপনার যদি টার্গেট থাকে ইউরোপ, আমেরিকা,কানাডা যাওয়ার তাহলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার জন্য ভালো স্কোর অর্জন করতে হবে। বর্তমানে সারা-বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ইংরেজি দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষার নাম হল IELTS, GRE, GMAT, TOFEL ইত্যাদি। উপযুক্ত পরীক্ষার স্কোর দিয়ে আপনার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন করতে হবে। তাই স্বপ্ন যদি থাকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার তাহলে ভাষা দক্ষতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার জন্য প্রস্তুতি নিন এখনই।

৩. সিজিপিএ: বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের শিক্ষার মূল্যায়ন যাচাই কারক হিসেবে পরিচিত হল সিজিপিএ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রায়শই বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চ সিজিপিএ এর কথা বলে। তবে হ্যাঁ ভালো স্কলারশিপ পেতে হলে আপনাকে আপনার রেজাল্ট এর দিকে নজর দিতে হবে। তাই অন্তত ৩.৫০ রাখার চেষ্টা করুন। কারণ রেজাল্ট ভালো হলে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকাংশে।

৪. রিসার্চ পেপার: বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রিসার্চ পেপার। আপনি যদি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে যান সেক্ষেত্রে আপনার রিসার্চ পেপার পাবলিশ থাকলে আপনি একটি ভালো স্কলারশিপ খুব সহজে পেয়ে যাবেন।

মূলত কোন গবেষণালব্ধ জার্নাল, আর্টিকেল কিংবা নিউজ পেপারে আপনি যদি লিখালিখি করেন এবং তার পাবলিশ লিংক আপনার ডকুমেন্ট এর সাথে পাঠিয়ে দেন তাহলে আপনি কম সিজিপিএ থাকলেও একটি ভালোমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ অর্জন করে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন। আজকাল ইন্টারনেট কিংবা ইউটিউব এর মধ্যে রিসার্চ পেপার সংক্রান্ত অনেক ভিডিও পেয়ে যাবেন। বিস্তারিত জেনে নিজেই প্রকাশ করতে পারবেন আপনার রিসার্চ পেপার।

৫. রিকোমেন্ডেশন: বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে লেটার অফ রিকমেন্ডেশনকে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। মূলত আপনার সম্পর্কে জানে, আপনাকে ভালো চিনে এমন ২ থেকে ৩ জন ব্যক্তির কাছ থেকে রিকোমেন্ডেশন আপনার প্রয়োজন হবে। তবে অবশ্যই পরিবারের কোন ব্যক্তির কাছ থেকে আপনি রিকমেন্ডেশন না চেয়ে আপনার কোন শিক্ষক, কোন মেন্টর, কোথাও জব করলে সেক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে আপনি রিকমেন্ডেশন লেটার নিতে পারেন। কারণ কারা রিকমেন্ডেশন দিচ্ছে তা মূল ব্যাপার নয়। বরং কি লিখছে সেটা মূল ব্যাপার।

৬. এক্সপেরিয়েন্স: বিদেশে অবস্থানের ফলে আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো সম্পর্কে আপনার জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে। এটা নিশ্চিত যে, বিদেশে অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব সম্পর্কে আপনি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফিরে আসবেন। একটি ভিন্ন সংস্কৃতির জনগন, তাদের প্রাত্যহিক জীবন যাত্রা সংশ্লিষ্ট নানা সমস্যা মোকাবেলার রীতিনীতি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের ফলে বিশ্ব সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়টি আপনি স্পষ্টভাবে অনুভব করবেন। বিদেশে বসবাস করতে গিয়ে বিদেশি ভাষা আপনাকে শিখতে হবে। ফলে নতুন ভাষা শিক্ষা এবং এর গুরত্ব আপনি উপলব্ধি করবেন।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এক্সপেরিয়েন্স আপনাকে বিদেশের মাটিতে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে কাজ করুন। বর্তমানে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে বাংলাদেশে। তাই আপনি শুরু থেকে তাদের সাথে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই ভলেন্টিয়ারিং কার্যক্রম আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।

উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই প্রক্রিয়া: স্কলারশিপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বাছাইয়ের পূর্বে আপনাকে কোন দেশে যাবেন তা নিয়ে আগে ভাবতে হবে। দেশ নির্বাচনের পর আপনাকে শহর নির্বাচন করতে হবে। মূলত শিক্ষাব্যবস্থা এবং জীবিকা নির্বাহের হিসাব পরিসংখ্যান এর মাধ্যমে যাচাই কিরে আপনাকে বাছাইয়ের কাজটি করতে হবে। যেমন শিক্ষা ব্যবস্থা এবং আধুনিক জীবনমানের দিকে এগিয়ে আছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, কানাডা, মালয়েশিয়া, ইত্যাদি।

তবে দেশ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই বেশ কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে। যেমন আপনাকে পড়াশোনার খরচ, টিউশন ফি, একোমোডেশন ফি, ইত্যাদি খরচসমূহ বিবেচনায় নিয়ে আপনাকে একটি দেশ সিলেক্ট করতে হবে।

বিদেশে অনেক বিষয়ে পড়াশোনার মাধ্যম খোলা রয়েছে। তবে আপনি কোন বিষয়ে পড়তে চাচ্ছেন? সে বিষয়ের চাহিদা দেশ কিংবা বিদেশে ঠিক কতখানি রয়েছে— এই সকল বিষয়কে মাথায় রেখে আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত বিষয় বেছে নিতে হবে। কারণ ডিমান্ডেবল সাবজেক্টে পড়াশোনা করলে আপনার চাকরি পাবার স্বভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি।

এবার আসি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনে। এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যারা প্রথম সারির কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য কোন ধরণের স্কলারশিপ প্রদান করে না। আবার এমন কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে তারা এক দেশের দ্বিতীয় সারির বিশ্ববিদ্যালয় হলেও অন্যদেশের তুলনায় একেবারে প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়। তাই আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখতে হবে আলোচিত বিষয়সমূহের উপর-

তবে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি দেশকে টার্গেট করে আবেদন করবেন না। বরং আপনার সক্ষমতা অনুযায়ী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করুন।

স্কলারশিপের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে কি প্রয়োজন?

বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আপনাকে প্রথম থেকে পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হবে। তাই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কি কি কাগজ পত্র আপনাকে সাথে রাখতে হবে চলুন জেনে নেওয়া যাক-

১. স্কলারশিপ এপ্লিকেশন ফর্ম: বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে স্কলারশিপ ফর্ম ডাউন-লোড করে তা সাথে সাথে পূরণ করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে মেইলে স্কলারশিপ পূরণ করতে হয় আবার কিছুক্ষেত্রে হার্ড-কপি সাবমিট করতে হয়। তাই সবার আগে আপনাকে আপনার স্কলারশিপ ফর্ম পাওয়া মাত্রই তা ফিলাপের কাজ করে নিতে হবে।

২. একাডেমিক সনদ বা ট্রান্সক্রিপ্ট: স্কলারশিপ ফর্মের সাথে আপনাকে আপনার শিক্ষাজীবনের যাবতীয় সকল ধরণের ডকুমেন্ট সাথে সত্যায়িত করে দিতে হবে। তাই স্কলারশিপের জন্য আবেদনের পূর্বে এই ডকুমেন্টগুলো আপনাকে সংগ্রহ করে সত্যায়িত করে রাখতে হবে।

৩. পাসপোর্ট কিংবা ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কপি: অবশ্যই আপনার বিদেশে আবেদনের পূর্বে একটি বৈধ পাসপোর্ট রেডি রাখতে হবে। পাসপোর্ট এর মেয়াদ যাতে কমপক্ষে ৬ মাস থাকে সেদিকে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। এপ্লিকেশন ফর্মের সাথে আপনার পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান কপি জমা দিতে হবে।

৪. ইংরেজি দক্ষতা পরীক্ষার স্কোর: আপনি যে দেশে এপ্লাই করুন না কেন স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার প্ৰয়োজন হবে ইংরেজি দক্ষতার যাচাইয়ের স্কোর। তাই বিদেশে যাওয়ার পূর্বে আপনাকে ইংরেজি দক্ষতা যাচাই স্কোরের মার্ক সংগ্রহ করতে হবে। তাই আপনার ইংরেজি দক্ষতা পরীক্ষার মার্ক-শিট আগেই সত্যায়িত করে নিতে হবে।

৫. স্টেটমেন্ট অফ পারপাস: একটি ভালো স্টেটমেন্ট অফ পারপাস বা SOP আপনাকে একটি ভালো স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে যাদের একাডেমিক রেজাল্ট তেমন ভালো নয়। কারো কারো ইংরেজি দক্ষতা স্কোর ভালো হয় না। তাই আপনি ভালোমানের SOP তৈরি করতে পারেন তাহলে এক্ষেত্রে আপনার স্কলারশিপ পাওয়ার পথ উন্মুক্ত করে দিতে পারে।

৬. রিকমেন্ডেশন লেটার: স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য রিকমেন্ডেশন বেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রায় সব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই এই ফর্ম দেওয়া থাকে। তাই আপনি চাইলে এই ফর্মের পাশাপাশি নিজের লেখা পেপারও যুক্ত করতে পারবেন। তাই আপনাকে চিনে, জানে এমন ব্যক্তি থেকে রিকোমেন্ডেশন লেটার নেওয়ার চেষ্টা করুন।

৭. সিভি: বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে স্কলারশিপের আবেদন পত্রের সাথে একটি সিভি জমা দিতে হবে। আপনার ব্যক্তিগত এবং প্রয়োজনীয় সকল তথ্য আপনার সিভিতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করুন।

৮. পিতামাতার আর্থিক তথ্য: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্ত অনুযায়ী আপনাকে আংশিক স্কলারশিপ প্রদানের ক্ষেত্রে তারা আপনার পিতামাতার আর্থিক তথ্য অথবা আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রমাণ দেখতে চায়। তাই সেক্ষেত্রে ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আবেদন পত্রের সাথে দিতে হবে।

৯. স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রমাণপত্র: আপনি শারীরিকভাবে ফিট কিনা তা যাচাইয়ের জন্য আপনার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর আপনাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রমাণপত্র স্ক্যান করে পাঠাতে হবে।

১০. গবেষণা গ্রন্থ: আপনি যদি বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে চান সেক্ষেত্রে আপনার পাবলিশ আর্টিকেল এবং জার্নাল লিঙ্ক সাথে দিতে পারেন— এতে স্কলারশিপ পাওয়া সম্ভাবনা বেড়ে যাবে অনেকখানি।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে সুবিধাঃ

ক. আত্ননির্ভরশীলতা: যারা বিদেশে লেখা পড়া করেন তারা বিচিত্র অভিজ্ঞতার কারণে বুদ্ধিমাত্রা ও মননশীলতার দিক থেকে অধিকতর সম্মৃদ্ধ হয়ে ওঠেন। নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ভাবতে শেখা এবং স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার ফলে তারা অধিক স্বাধীন এবং অধিক দক্ষভাবে চিন্তা ও কাজ করতে শেখেন। যে কোন চ্যালেঞ্জিং কাজ বা পেশায় সফল হওয়ার জন্য জরুরি অনেক গুণ তাদের মধ্যে অধিক বিকশিত হয় যা অনেক ক্ষেত্রে দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে লক্ষ করা যায় না। তাই দেখা যায়, বিদেশে থাকার অভিজ্ঞতা অত্যন্ত মূল্যবান, এমনকি কখনো কখনো তা ব্যাক্তির সামগ্রিক জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। নতুন সংস্কৃতির সাথে পরিচয় এবং সেখান থেকে অর্জিত জ্ঞান আপনাকে অধিকতর আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। ফলে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পরে আপনার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার যথাযথ মূল্যায়ন হবে।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আপনি পরিপূর্ণভাবে আত্ননির্ভরশীলতা অর্জনের সুযোগ পাবেন। পূর্বে যেখানে আপনি পরিবারের উপর নির্ভরশীল থাকতেন, এখন আপনাকে আপনার জীবনের সকল ধরণের সিদ্ধান্ত আপনাকে নিতে হবে। বিদেশে কোন ধরণের হেল্পিং হ্যান্ড নেই বিধায় আপনার ব্যক্তিগত কাজগুলো আপনাকে করতে হবে। সেই সাথে ব্যক্তিগত হিসাব নিকাশ মেনে চলার মাধ্যমে জীবনের অর্থ আপনি সহজে বুঝতে পারবেন। অর্থাৎ বিদেশে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে আপনি পুরোপুরি আত্ননির্ভশীল হওয়া সুযোগ অর্জন করবেন।

খ. সংস্কৃতি চর্চা: বিদেশে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পাবেন। এক দেশ থেকে অন্যদেশে কি পরিমাণ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র রয়েছে তা আপনি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে না আসলে কখনোই অনুধাবন করতে পারবেন না। একটি ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন সংস্কৃতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া কষ্টকর হলেও আপনি খুব সহজে ধীরে ধীরে একটি নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখবেন। পাশাপাশি আপনি একটি ভিন্ন দেশে আচার আচরণ, সংস্কৃতি, নানা ধরণের অনুষ্ঠান সম্পর্কে খুব কাছে থেকে জানার সুযোগ অর্জন করতে পারবেন।

গ. নতুন ভাষা রপ্ত: আপনি যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে আসবেন সে দেশের সংস্কৃতির সাথে ভাষার বেশ পরিবর্তন রয়েছে। তাই একটি ভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যাওয়ার ফলে আপনি সে দেশের ভাষা রপ্ত করতে পারবেন। একটি ভিনদেশে এসে সে দেশের ভাষা রপ্ত করতে পারলে আপনি চলার ক্ষেত্রে যেমন সুবিধা পাবেন ঠিক তেমনি করে সে দেশের মানুষের সাথে খুব তাড়াতাড়ি যোগাযোগের ক্ষেত্রেও বেশ সুবিধা পাবেন।

ঘ. কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপ: বর্তমানে চলার ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন স্কিল এর উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। এই কমিউনিকেশন স্কিল আপনাকে একটি ভিন্ন দেশের নতুন পরিবেশকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি আপনাকে আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ঙ. আধুনিক শিক্ষা অর্জন: বিদেশে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে আপনি উন্নত এবং আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পাবেন। দেশের পুঁথিগত বিদ্যা থেকে আপনি গবেষণালব্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সমন্বয় সাধন করতে পারবেন। নতুন পরিবেশ, নতুন জীবনযাত্রার সাথে আপনি বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবার পরিপূর্ণ সুযোগ পাবেন।

চ. ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট: বিদেশে উচ্চশিক্ষা শুধুমাত্র শিক্ষা এবং ব্যক্তিত্বকেই সমৃদ্ধ করবেনা, আপনার পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। বিশেষত ব্যবসা, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি এবং চাকরির ক্ষেত্রে আপনার পেশাগত দক্ষতা খুবই মূল্যবান ভূমিকা রাখবে। চাকরির বাজারে আপনার চাহিদা বেড়ে যাবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।

বিদেশ ফেরত গ্র্যাজুয়েটরা আন্তর্জাতিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ এবং মাতৃভাষা ছাড়াও এক বা একাধিক ভাষাতে দক্ষ এই দুটি বিষয়ের উপর জোর দিয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগ, বিশ্লষণাত্বক দক্ষতা, ভিন্ন সংস্কৃতি ও সমাজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জ্ঞাত ও দক্ষ। এদের পক্ষে নতুন পরিস্থিতিতে বিকল্প উপায় ভাবা এবং ঝুকি নেয়া সম্ভব হয় বলে প্রতিষ্ঠানগুলো গ্র্যাজুয়েটদের জন্য সর্বোচ্চ রকম সুযোগ-সুবিধা প্রস্তাব দিয়ে থাকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানে রাখার জন্য।

দেশের বাজারে বিদেশে উচ্চশিক্ষার কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহে আপনি বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ফলে খুব সহজে নিজের পছন্দের পজিশনে চাকরি করতে পারছেন। পাশাপাশি একটি ডিগ্রী পাচ্ছেন যা আপনার বিদেশের মাটিতেও ক্যারিয়ার বুস্ট করতে বেশ সাহায্য করবে।

ছ. এডভেঞ্চার: আপনি যখন একটি নতুন দেশে যাবেন সে দেশকে জানার ক্ষেত্রে ভ্রমণের বিকল্প নেই। তাই আপনি যখন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে আসবেন তখন আপনি একটি নতুন দেশ সম্পর্কে এডভেঞ্চার করার সুযোগ পাবেন। একটি নতুন দেশ এক্সপ্লোরের মাধ্যমে সে দেশের পরিবেশের সঙ্গে খুব সহজে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন।

জ. পার্ট টাইম চাকরি: বিদেশে উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল পার্ট টাইম চাকরি। আপনি বিদেশে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে পড়াশোনার পাশাপাশি নিজে আয় করতে পারবেন। বেশিরভাগ দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ পেতে শিক্ষার্থীরা পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে।

ঝ. একটি নিশ্চিত ভবিষ্যৎ: বর্তমান বাজারে বিদেশে উচ্চশিক্ষার চাহিদা রয়েছে তুঙ্গে। আপনি যদি একটি ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করতে পারেন তাহলে আপনাকে চাকরি খুঁজতে হৰে না বরং চাকরি আপনাকে খুঁজে নিবে। তাই একটি ভালো মানের চাকরি, উন্নত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে চাইলে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আপনাকে স্বাগতম।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অসুবিধাসমূহঃ

শেষকথা:

উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিদেশ যাওয়া একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার নাম। কারণ আপনি রাতারাতি বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে পারবেন না। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আপনাকে সফলতা এনে দিতে সাহায্য করবে।

প্রশিক্ষণ কার্যালয়ঃ

পাইওনিয়ার কারিগরি প্রশিক্ষণ একাডেমী (পিটিএ)

রহমান মঞ্জিল, ওয়াপদাগেইট, পুরানবগুড়া, বগুড়া।

কাউন্সিলর বাড়ী বললে দেখিয়ে দিবে।

৮৮০-১৭১০-৫৮৮৫৮৮, ৮৮০-১৭১২-১২৫৬০২

Email: pioneerbogura@gmail.com

Email: ptabogura@gmail.com

Facebook: pioneerbogura